Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নিরাপদে তালগাছ ও তালের গুড় উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি

নিরাপদে তালগাছ ও তালের গুড় উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি
ড. মো. ওমর আলী১ ড. মোছা. কোহিনুর বেগম২
তাল ইড়ৎধংংঁং গণের একটি প্রজাতি। এর প্রজাতিগত নাম ইড়ৎধংংঁং ভষধনবষষরভবৎ বাংলাদেশের সব এলাকায় কমবেশি তালগাছ দেখা যায়। তবে বৃহত্তর ফরিদপুর, পাবনা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশি এই গাছ দেখা যায়। তাল এর পরিকল্পিত রোপণ ও ব্যবহার করা হলে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। তাল  মরু এলাকার গাছ বিধায় বাংলাদেশের সকল এলাকায় অযত্ন অবহেলায় জন্মে থাকে। এ গাছ পানি ছাড়াই দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে। আবার গাছের গোড়ায় পানি দাঁড়ালেও সহজে মারা যায় না। তাই তাল বৃহত্তর রাজশাহী জেলার বরেন্দ্র এলাকা হতে ঝড়-ঝঞ্চা-লবণাক্তপ্রবণ দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের সকল অঞ্চলে উৎপাদন ও ব্যবহার হয়।
অপার সম্ভাবনাময়ী তালগাছের গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
কচি  তালশাঁস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। পাকাতালের রস পিঠা, পায়েস, জ্যাম জেলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আর এ সমস্ত খাদ্যদ্রব্য বেশ উপাদেয় ও মজাদার বিধায় সকলেই কমবেশি পছন্দ করে। তালগাছের কা- ছাদ, দেওয়াল, বেড়া এবং আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ডোঙ্গা, নৌকা এবং বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প তৈরিতেও এর ট্রাঙ্ক ব্যবহৃত হয়। তালের পাতা থেকে শক্তিশালী এবং বহুমুখী আঁশ পাওয়া যায়; যা দিয়ে ম্যাট, দড়ি, টুপি এবং আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প তৈরি হয়। তালগাছের বিভিন্ন অংশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তালের রসে শ্বাসযন্ত্রের ব্যাধি, বদহজম সারানোর গুণও উপস্থিত আছে। এর পাতা, শিকড় এবং বাকলেও অনেক ওষধি গুণাগুণ উপস্থিত আছে রয়েছে।
তালগাছ শুষ্ক ও অর্ধশুষ্ক এলাকায়ও ভালো জন্মায় এবং বৈরী আবহাওয়া সহ্য করতে পারে। এটা মাটির ক্ষয়রোধ, পানি ধরে রাখতে  এবং বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত ভারসাম্য (ঊপড়ষড়মরপধষ নধষধহপব) বজায় রাখে। এই গাছ উঁচু এবং এর পাতার অগ্রভাগ সুচালো হওয়ায় এটি বজ্রনিরোধক হিসেবে কাজ করে। এজন্য হাওর, বাঁওড় এলাকায় তালগাছের গুরুত্ব খুব বেশি।
উচ্চ মাত্রার চিনি বিশেষ করে সুক্রোজ বিদ্যমান থাকায় তালের রস  থেকে ইথানল তৈরির সম্ভাবনা প্রচুর।  এটি নবায়নযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব জৈব জ্বালানি। এটা জীবাষ্ম জ্বালানির উত্তম পরিপূরক হতে পারে; যা গ্রীন হাউজ গ্যাসের নিংস্বরন কমাতে পারে।
ইথানল তৈরির জন্য কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এটা একটা দেশের উন্নয়নে এবং কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তালের রস থেকে প্রস্তুতকৃত ইথানল রন্ধনকাজে, আলো জ্বালাতে এবং পরিবহনে ব্যবহৃত হতে পারে। এটা ওষুধ প্রস্তুতিতে, রাসায়নিকে দ্রব্য হিসেবে এবং অ্যালকোহোলিক পানীয় হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।         
নিরাপদ তালগাছ উৎপাদন প্রযুক্তি
সরাসরি তালের বীজ মাটিতে লাগালে তা থেকে চারা তৈরির সম্ভাবনা কম থাকে। চারা তৈরি করে কাক্সিক্ষত জায়গায় লাগালে শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। তালের চারা উৎপাদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল।
উত্তম মাতৃগাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। পরিপক্ব তাল হতে বীজ সংগ্রহ করে পাকা তালের  উপরের শক্ত খোসা ছাড়িয়ে কিছু সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পরে হাত দ্বারা কচলিয়ে আঁশ হতে রস বের করতে হবে। পরিপক্ব তাল বীজের অংকুরোদগমের হার সাধারণত ৭০-১০০ ভাগ।
পাকা মেঝে বা ইট বিছানো মেঝেতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। তবে মাটির উপরও সরাসরি বীজতলা করা যেতে পারে। মাটির উপর বীজতলা করতে হলে মাটির উপর মোটা পলিথিন শিট বিছিয়ে দিয়ে তার উপর ৩০-৫০ সেমি: পুরু করে বেলে মাটি বা কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি বিছিয়ে দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বীজ পাশাপাশি রেখে বীজতলার উপর সারি করে সাজাতে হবে এবং বীজের উপর ২-৩ সেমি: পুরু করে কম্পোস্ট মিশ্রিত বালি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। বীজতলা সব সময় পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বীজ অংকুরিত হতে শুরু করবে। বীজ অংকুরোদগমের সময় শিকড়ের মত দেখতে টিউবের আকৃতিতে বীজপত্র বের হয়। যাকে জর্মিটিউম বলা হয়।
১০-১৫ সপ্তাহের মধ্যে ঈড়ষবড়ঢ়ঃরষব এর উপরে একটি পাতলা আবরণীতে পরিণত হয়। এ সময় চারায় একটি ঈড়ষবড়ঢ়ঃরষব ও শিকড় থাকে। চারার গোড়া ও শিকড়ের গা হতে ছোট ছোট অনু শিকড়ও গজাতে শুরু করে। ঈড়ষবড়ঢ়ঃরষব  এর বৃদ্ধি শেষ হলে অর্থাৎ বীজের সাথে জার্মটিউবের সংযোগ স্থানে পচতে বা শুকাতে শুরু করলে চারা পলিব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে।
বীজতলায় উৎপাদিত চারা গোবর/কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরা পলিব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। পলিব্যাগের আকার ১৫দ্ধ২৫ সেমি. এবং পলিথিনের পুরুত্ব ০.০৬/০.০৭ মিমি. হতে পারে। প্রতিটি পলিব্যাগের নিচে ২/৩ টি ছিদ্র করতে হবে।
চারা পলিব্যাগে স্থানান্তরকালে বেলে মাটি/কম্পোস্ট সরিয়ে চারা উন্মুক্ত করতে হবে এবং বীজ হতে চারা আলাদা করতে হবে। বীজ হতে চারা আলাদা করতে হলে জার্মটিউবের উপরে অর্থাৎ বীজসংলগ্ন চিকন, পচা/শুকনা স্থানে কাটতে হবে। যদি চারার শিকড় বেশি লম্বা হয় তবে প্রয়োজনে চারার সাথে ১০-১৫ সেমি. শিকড় রেখে ধারালো চাকু দ্বারা কাটতে হবে। পলিব্যাগের ২/৩ অংশ গোবর/কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি দ্বারা ভরতে হবে। একটি চারা পলিব্যাগে এমনভাবে রাখতে হবে যেন চারার গোড়া প্রায় ৫-৬ সেমি: ব্যাগের মধ্যে থাকে। চারা পলিব্যাগে বসানোর পর ব্যাগের  খালি অংশ গোবর/কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি ভরতে হবে। পলিব্যাগে চারা স্থানান্তরের পর কমপক্ষে ২-৩ সপ্তাহ ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে প্রয়োজনে সেচ দিয়ে পলিব্যাগের মাটি আর্দ্র রাখতে হবে। জুন-জুলাই মাসের মধ্যে ৩০-৫০ সেমি. লস্বা দুই পাতার চারা পলিব্যাগে পাওয়া যাবে।
মৌসুমী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পলিব্যাগে উত্তোলিত ৩০-৩৫ সেমি. লম্বা দু’ পাতা বিশিষ্ট চারা মূল জমিতে রোপণ করা যায়। তবে মাটিতে প্রয়োজনীয় রস থাকলে বা সেচ সুবিধা থাকলে চারা মে মাসেও রোপণ করা যায়।
 বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর শারীরতত্ত্ব ও চিনি রসায়ন বিভাগ তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে বিগত তিন বছর ধরে লক্ষাধিক চারা উৎপাদন করে যাচ্ছে।
তালগাছ থেকে নিরাপদে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি আধুনিক প্রযুক্তি
তাল গাছের পুষ্পমঞ্জরি থেকে সংগৃহীত রস থেকে গুড়, তালমিশ্রি তৈরি করা হয়। সাধারণত ১০-১২ বছর বয়সের পুরুষ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। মার্চের শেষ সপ্তাহে (চৈত্রের ২য় সপ্তাহ) পুরুষ তালের পুষ্পমঞ্জরি বেড় হয়। নরম পুষ্পমঞ্জরিকে প্রথম তিনদিন প্রতিদিন আধাঘণ্টা এক হাতে ধরে অপর হাতের তালুর চাপের মাধ্যমে উপর থেকে নীচে সকালে ও বিকালে প্রায় ৪০/৪৫ বার হালকাভাবে টানতে হবে। কোনভাবেই জোড়ে আঘাত করা যাবে না। পুষ্পমঞ্জরি একটু শক্ত হলে পুষ্পমঞ্জরির দুই পাশে ২টি বাশের বাতা দিয়ে উপর থেকে নীচে ২/৩ দিন সকাল ও বিকেলে ২০/২৫ বার টানতে হবে। এরপর পুষ্পমঞ্জরির শেষ প্রান্তে ধারালো দা দিয়ে   সোজা করে কাটতে হবে । কাটা অংশ দিয়ে মিষ্টি রস ফোটায় ফোটায় পড়তে থাকে। মার্চ থেকে মধ্য জুলাই (আষাঢ় মাস) পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যাবে। পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ তালগাছ থেকে প্রতিদিন ২৫/৩০ লিটার পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যায়। স্ত্রী তাল গাছ হতে রস সংগ্রহ করতে মে মাসে ফলের মঞ্জরিদ- বেড় হলে ধারালো দা দিয়ে কাটতে হয়। পুষ্পমঞ্জরি হতে সংগৃহীত এই রস জ্বাল দিয়ে গুড়, তালমিশ্রি প্রস্তুত করা হয়।
তালের গুড় পুষ্টিমানের দিক দিয়ে খুবই সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর মিনারেল যেমন আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস বিদ্যমান। এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ বিদ্যমান। এতে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান যা আমাদের দেহকে ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে দেহকে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এতে বিদ্যমান ডায়েটারি ফাইবার হজমে সহায়তা করে, কোলেস্টেরল লেভেলকে এবং রক্তের সুগারকে  নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর শারীরতত্ত্ব ও চিনি রসায়ন বিভাগের তাদের নিজস্ব বাগান থেকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তালের রস সংগ্রহ করে তা থেকে গুড়, তালমিশ্রি তৈরি এবং সংগৃহীত রসের রাসায়নিক বিশ্লেষণের উপর কাজ করে যাচ্ছে।
সর্বোপরি বহুবিধ গুণসম্পন্ন, পরিবেশবান্ধব এই গাছটির চারা উৎপাদন এবং তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : ১মহাপরিচালক, ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএসআরআই, ঈশ্বরদী, পাবনা। মোবাইল: ০১৭৩১৯১৯১৭৪; ই-মেইল: kohinoorbegum.bsri@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon